সার ও এর শ্রেণী বিভাগ
সার
উদ্ভিদ তথা ফসলের পুষ্টি উপাদান সরবরাহের উদ্দেশে যে সকল রাসায়নিক, জৈব ও অণুজৈবিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তাদেরকে সার বলা হয়। উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফসল তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বাতাস, পানি ও মাটি থেকে সংগ্রহ করে থাকে। কোন জমিতে ক্রমাগত ফসল চাষ করতে থাকলে মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ফসলের প্রয়োজনের তুলনায় তা ঘাটতি পড়ে; ফলে ফসলের চাহিদা পুরণ হয়না। এমতাবস্থায় ফসল অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে এবং ফলশ্রæতিতে ফলন কম হয়। পুষ্টি উপাদানের এ ঘাটতি পুরণের জন্য তাই সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মাটিতে স্থানভেদে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সালফার (গন্ধক), জিংক (দস্তা), বোরণ ও ম্যাগনেসিয়াম এ সাতটি উপাদানের ঘাটতি দেখা যায় এবং সার প্রয়োগের মাধ্যমে এ ঘাটতি পুরণ করতে হয়। মাটির উর্বরতা ও ফসলের চাহিদাভেদে সার প্রয়োগের মাত্রা বিভিন্ন হয়ে থাকে।
সারের শ্রেণিবিভাগ
সারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন- সারের উৎস, সারে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান এবং সারের আকৃতি প্রকৃতি ও গঠন অনুসারে।
উৎস অনুসারে সারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন-
ক) রাসায়নিক সার: রাসায়নিক উৎস থেকে প্রস্তুতকৃত সার; যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি ইত্যাদি।
খ) জৈব সার: জৈব উৎস থেকে প্রস্তুতকৃত সার অর্থৎ জৈব দ্রব্য পঁচিয়ে যে সার প্রস্তুত করা হয়।
গ) অণুজীব সার: ফসলের জন্য উপকারী অণুজীব সম্বলিত সার। এ সারকে বায়ো-ফার্টিলাইজার বলা হয়ে থাকে। যে সকল ফসলের শিকড়ে গুটি তৈরী হয় সে সকল ফসল যেমন- ডাল, সীম, বরবটি, বাদাম, অড়হর ইত্যাদি ফসলে অণূজীব সার প্রয়োগ করা যায়। তবে একই অণুজীব সার সব ফসলে ব্যবহার করা যায় না; প্রত্যকটি ফসলের জন্য অণূজীব সার ভিন্ন অর্থাৎ একটি অণূজীব সার মাত্র একটি নির্দিষ্ট ফসলেই কাজ করে অন্য ফসলে কাজ করে না।
ফসলের পুষ্টি উপাদানের শ্রেণী অনুসারে সারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন-
ক) মূখ্য পুষ্টি উপাদান বিশিষ্ট সার; যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম ইত্যাদি।
খ) গৌণ পুষ্টি উপাদান বিশিষ্ট সার; যেমন- জিংক সালফেট (মনো হাইড্রেট), জিংক সালফেট (হেপ্টা হাইড্রেট), বরিক এসিড, সলুবোর ইত্যাদি।
সারের আকৃতিপ্রকৃতি ও গঠন অনুসারে সারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন-
ক) সরল সার: একক পুষ্টি উপাদান বিশিষ্ট সার; যেমন- ইউরিয়া (নাইট্রোজেন), টিএসপি (ফসফরাস), এমওপি (পটাসিয়াম) ইত্যাদি।
খ) যৌগিক সার: রাসায়নিকভাবে সংযুক্ত একাধিক পুষ্টি উপাদান বিশিষ্ট সার; যেমন- ডিএপি (নাইট্রোজেন ও ফসফরাস), এসওপি (ফসফরাস ও সালফার) ইত্যাদি।
গ) মিশ্র সার: একাধিক সার মিশ্রণের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সার; যেমন- এনপিকেএস মিশ্র সার।